দেশে ২ মাসে লাখেরও বেশি ডায়রিয়া রোগী
স্টাফ রিপোর্টার
আপলোড সময় :
০৬-০১-২০২৫ ০৮:৪৪:০০ অপরাহ্ন
আপডেট সময় :
০৬-০১-২০২৫ ০৮:৪৪:০০ অপরাহ্ন
সংবাদচিত্র : সংগৃহীত
কিছু দিন ধরে ডায়রিয়ায় ভুগছিল পাঁচ বছর বয়সী ফাহিম। একপর্যায়ে শরীর দুর্বল হয়ে পড়লে তাকে নেওয়া হয় রাজধানীর মহাখালী আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র (আইসিডিডিআর,বি) হাসপাতালে। সেখানে তাকে একদিন ভর্তি রাখার পর পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হলে রিলিজ করে দেয় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। তবে তার মতো আরও অনেক শিশু এই মুহূর্তে চিকিৎসাধীন আছে এই হাসপাতালে। তাদের অনেকেই বেশ কিছু দিন ধরে ডায়রিয়ার চিকিৎসা নিচ্ছে বলে জানিয়েছেন সেখানকার চিকিৎসকরা।
দেশে গরমে এবং শীতে ডায়রিয়ার প্রকোপ বেশি দেখা দেয়। গত নভেম্বর থেকে বাড়তে শুরু করেছে ডায়রিয়া রোগী। এটিকে মৌসুমের স্বাভাবিক হার হিসাবেই দেখছে স্বাস্থ্য অধিদফতর। তবে এই মৌসুমে রোটা ভাইরাসজনিত ডায়রিয়ার প্রকোপ বেশি বলে ধারণা চিকিৎসকদের।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, গত নভেম্বর থেকে রোববার (৫ জানুয়ারি) পর্যন্ত সারা দেশে ১ লাখ ২০ হাজার ৩৮০ জন ডায়রিয়া রোগী পাওয়া গেছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি রোগী পাওয়া গেছে চট্টগ্রাম বিভাগে, এরপর আছে রংপুর ও খুলনা।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের তথ্য বলছে, গত ১ নভেম্বর থেকে চলতি মাসের ৫ জানুয়ারি পর্যন্ত ঢাকা বিভাগে ডায়রিয়া রোগী পাওয়া গেছে ১৪ হাজার ৭৩১ জন, চট্টগ্রাম বিভাগে ৩৪ হাজার ৬৪৪ জন, রংপুর বিভাগে ২১ হাজার ১৭ জন, খুলনা বিভাগে ২১ হাজার ৩৮১ জন, রাজশাহী বিভাগে ১০ হাজার ২৬৭ জন, বরিশালে ৮ হাজার ৭৯৮ জন, সিলেটে ৬ হাজার ১৯৭ জন এবং ময়মনসিংহে ৬ হাজার ৩০৯ জন। এর মধ্যে চট্টগ্রামে ডায়রিয়ায় একজনের মৃত্যু হয়েছে।অপরদিকে গত বছরের নভেম্বর-ডিসেম্বরে গড়ে ৮৫০ থেকে ৯০০ রোগী চিকিৎসা নিয়েছেন। হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের ৮০ শতাংশই শিশু।
আইসিডিডিআর,বির তথ্য বলছে, গত ৪ জানুয়ারি সকাল থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত ২৬৭ জন ডায়রিয়া রোগী হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসেন। তার আগের দিন ৩ জানুয়ারি ৬৪৮ জন ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগী চিকিৎসা নেন। আর ১ জানুয়ারি চিকিৎসা নেন ৮৫০ জন।এর আগে ২০২৪ সালের ২৮ ডিসেম্বর এ হাসপাতালে চিকিৎসা নেন ৮৯১ জন, ২৯ ডিসেম্বর ৮২৬ জন, ৩০ ডিসেম্বর ৯১৩ জন, ৩১ ডিসেম্বর ৮৮৪ জন।
চিকিৎসকদের মতে, শীত এলেই ডায়রিয়া রোগে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ে। বিশেষ করে নভেম্বর, ডিসেম্বর, জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি—এই চার মাস রোটা ভাইরাসের প্রভাব বেশি থাকে। আইসিডিডিআর,বি’র পরীক্ষায় দেখা গেছে, বর্তমান সময়ে হাসপাতালে আসা ৪০ থেকে ৫০ শতাংশ রোগীর ডায়রিয়া হচ্ছে রোটা ভাইরাসের কারণে।
আইসিডিডিআর,বির ঢাকা হাসপাতালের ক্লিনিক্যাল লিড ডা. শোয়েব বিন ইসলাম জানান, প্রতিবছর শীতের শুরুতে ডায়রিয়া রোগীর প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়। আমাদের এখানেও প্রচুর রোগী আসে। যদিও বিগত সময়ের তুলনায় এ বছর কিছুটা বেশি। সিটি করপোরেশন এবং আশপাশের এলাকা থেকেও প্রচুর রোগী আসছে। আমরা পরীক্ষা করে দেখেছি যে রোটা ভাইরাসের কারণে ডায়রিয়ার প্রকোপটা বেশি।
আইসিডিডিআর,বি জানাচ্ছে, যেসব রোগী ভর্তি হচ্ছে তাদের অনেকের বয়স পাঁচ বছরের কম। প্রতিষ্ঠানটি বলছে, ডায়রিয়া থেকে তাৎক্ষণিক আরোগ্য লাভ হয় না। নিয়ম মেনে খাবার স্যালাইন আর পথ্য খেলে ধীরে ধীরে ভালো হয়।আইসিডিডিআর,বির তথ্যমতে, ডায়রিয়া হলে এক প্যাকেট স্যালাইন আধা লিটার পানিতে গুলিয়ে খেতে হবে। ১০ বছরের বেশি বয়সীদের ক্ষেত্রে প্রতিবার পায়খানার পর ১ গ্লাস (২৫০ মিলিলিটার) স্যালাইন খেতে হবে। শিশুদের ক্ষেত্রে প্রতিবার পায়খানার পর শিশুর ওজন যত কেজি তত চা-চামচ বা যতটুকু পায়খানা হয়েছে, আনুমানিক সেই পরিমাণ খাবার স্যালাইন খাওয়াতে হবে। সেই সঙ্গে শিশু বমি করলে ধীরে ধীরে খাওয়াতে হবে। যেমন- ৩ বা ৪ মিনিট পর পর ১ চা-চামচ করে।
ডায়রিয়ায় আক্রান্ত শিশুদের মধ্যে খাবার স্যালাইনের পাশাপাশি ২ বছরের নিচের শিশুকে অবশ্যই বুকের দুধ দিতে হবে। কোনও অবস্থাতেই তা বন্ধ করা যাবে না। ছয় মাসের বেশি বয়সী রোগীকে স্যালাইনের পাশাপাশি সব ধরনের স্বাভাবিক খাবারও দিতে হবে বলে জানিয়েছে আইসিডিডিআর,বি। ছয় মাস থেকে ৫ বছরের শিশুকে প্রতিদিন ১টি করে জিংক ট্যাবলেট পানিতে গুলিয়ে ১০ দিন খাওয়াতে হবে।
রোগীকে খাবার স্যালাইনের পাশাপাশি বেশি বেশি তরল খাবার, যেমন- ডাবের পানি, চিড়ার পানি, স্যুপ খাওয়াতে হবে। আইসিডিডিআর,বি বলছে, কোমল পানীয়, ফলের জুস, আঙ্গুর, বেদানা খাওয়ানো যাবে না। যদি অবস্থার উন্নতি না হয় তবে দ্রুত হাসপাতাল, স্বাস্থ্যকেন্দ্র অথবা ডাক্তারের সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে।
ডায়রিয়া থেকে বাঁচার উপায় সম্পর্কে প্রতিষ্ঠানটির পরামর্শ হচ্ছে—পানি ফোটানোর সময় বলক ওঠার পর আরও পাঁচ মিনিট চুলায় রাখুন। এরপর ঠান্ডা হলে পান করুন। ফোটানোর ব্যবস্থা না থাকলে প্রতি ৩ লিটার পানিতে একটি পানি-বিশুদ্ধকরণ ক্লোরিন ট্যাবলেট দিয়ে পানি নিরাপদ করতে হবে। রাস্তার পাশের অস্বাস্থ্যকর ও উন্মুক্ত খাবার না খাওয়ার পরামর্শও দিচ্ছে আইসিডিডিআর,বি। এছাড়া খাবার আগে ২০ সেকেন্ড ধরে সাবান পানি দিয়ে ভালোভাবে হাতও ধুয়ে নিতে হবে।
শিশুদের ফিডার এড়িয়ে যাওয়ার পরামর্শও দিয়েছে আইসিডিডিআর,বি। তবে যদি খাওয়াতেই হয়, তবে ফোটানো পানি ও সাবান দিয়ে ভালো করে ফিডারটি ধুয়ে নিতে বলা হয়েছে। ফিডারের নিপলের ছিদ্রটিও ভালোভাবে পরিষ্কার করে নিতে হবে।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার পরিচালক মো. ফরহাদ হোসেন বলেন, ‘শীত মৌসুমে ডায়রিয়ার প্রকোপ স্বাভাবিক। খুব বেশি বাড়েনি এখনও। এই সময়ে রোটা ভাইরাসের প্রকোপ থাকে। এখন পর্যন্ত আমরা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছি।
বাংলাস্কুপ/প্রতিবেদক/এনআইএন/এসকে
প্রিন্ট করুন
কমেন্ট বক্স